ব্রেকিং নিউজ

চলে গেলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী নগরীর চৌদ্দপাইয়ের বিহাসের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন।

হাসান আজিজুল হকের ছেলে ড. ইমতিয়াজ হাসান মৌলি, নাট্যজন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক ও রাবি শিক্ষক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু সমকালকে বলেন, ‘স্যারের ছেলে মৌলি ফোন করে খবরটি জানালো। আমি স্যারের বাসায় যাচ্ছি।’

রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং নাট্যব্যক্তিত্ব ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) বাদ জোহর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে স্যারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে সমহিত করা হবে। জানাজার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্যারের মরদেহ রাখা হবে।’

হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ এবং মায়ের নাম জোহরা খাতুন। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। জীবনের বেশিরভাগ সময় তার রাজশাহীতে কেটেছে। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ (রাজশাহী কলেজ) থেকে দর্শনে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ অধ্যাপনা করেন।

১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন হাসান আজিজুল হক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় এলাকার আবাসিক এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন এই কথাসাহিত্যিক।

হাসান আজিজুল হক ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য জীবনে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৬৭ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

২০১২ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি পান হাসান আজিজুল হক। এছাড়া বাংলাদেশ লেখক শিবির পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, দিবারাত্রির কাব্য সাহিত্য পুরস্কার (পশিচমবঙ্গ), অমিয়ভূষণ সম্মাননা (জলপাইগুড়ি), সেলিম আল দীন লোকনাট্য পদক, শওকত ওসমান সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

হাসান আজিজুল হকের বইয়ের মধ্যে রয়েছে- গল্প: সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য, আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, আমরা অপেক্ষা করছি, মা-মেয়ের সংসার, নির্বাচিত গল্প, রাঢ়বঙ্গের গল্প। উপন্যাস : আগুনপাখি, সাবিত্রী উপাখ্যান। উপন্যাসিকা : বৃত্তায়ন, শিউলি, বিধবাদের কথা। প্রবন্ধ : কথাসাহিত্যের কথকতা, অপ্রকাশের ভার, অতলের আঁধি, চালচিত্রের খুঁটিনাটি। আত্মজীবনী: ফিরে যাই ফিরে আসি (১ম অংশ), উঁকি দিয়ে দিগন্ত (২য় অংশ)। কিশোর : লাল ঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধান। অন্যান্য: করতলে ছিন্নমাথা, সক্রেটিস।

Leave A Reply

Your email address will not be published.