ব্রেকিং নিউজ

ক্লিনফিড নিয়ে কেবল অপারেটরদের অজুহাত অযৌক্তিক: তথ্যমন্ত্রী

সরকারি নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনযুক্ত বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ থাকায় ওই চ্যানেলগুলোর দেশিয় পরিবেশক-অপারেটররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার যে দাবি তুলছেন তা ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘কেবল অপারেটরদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কার কথা কেউ কেউ বলছে, এটি জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার মতো। কেবল অপারেটররা কি মানুষের কাছ থেকে যে চার্জ নেয় সেটি কি কমিয়ে দিয়েছে? তাদের আয় এক টাকাও কমে নাই। বরং আরও টাকা সাশ্রয় হবে।’

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের পর বিজ্ঞাপনযুক্ত কোনো বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার করা যাবে না। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কেবল অপারেটরদের বিজ্ঞাপন থাকা বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রাখতে হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে। প্রথমত আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি, বন্ধ করার জন্যও বলিনি। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, এখানে যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে কিন্তু সেটি দেশের আইন মেনে করতে হয়।‘

বহু বছর ধরে দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্লিনফিড ছাড়াই বিদেশি চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে সম্প্রচারিত হচ্ছিল বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এই আইন বাস্তবায়নের কথা দুবছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম এবং বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে, নোটিস করা হয়েছে। সবশেষ আগস্টে সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে পহেলা অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করব। আমরা সেটিই করেছি, কোনো চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি। কেউ কেউ বলছে, ডিজিটালাইড না হওয়া পর্যন্ত এ আইন শিথিল রাখার জন্য। পুরো ভারতবর্ষ তো ডিজিটাল হয় নাই, সে সব দেশেও তো আইন কার্যকর আছে, সেখানে ডিজিটাল হওয়ার আগে থেকেই আইন কার্যকর আছে। সুতরাং আমাদের দেশে আইনকে তোয়াক্কা না করে এ ধরণের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই।’

বিদেশি বেশকয়েকটি চ্যানেল সম্প্রচার অপারেটররা বন্ধ রেখেছে সে বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা যেহেতু সংশ্লিষ্ট চ্যানেল থেকে ক্লিনফিড পায়নি, সেজন্য বন্ধ রেখেছে, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা কোনোটাই বন্ধ করতে বলিনি, আগে থেকেই সময় দেওয়া হয়েছিল যাতে করে তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোকে ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য বলে এবং পাশাপাশি তারাও প্রস্তুতি নেয়। যথেষ্ট অর্থাৎ দুই বছর সময় দেয়া হয়েছিল। আমি দুই বছর আগে থেকে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি। এর আগেও এ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সবশেষে সবার সাথে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স ২৪, রাশিয়া টুডেসহ প্রায় ২৪টি চ্যানেলের ক্লিনফিড আসলেও অনেক কেবল অপারেটররা লাইসেন্সের ‘শর্তভঙ্গ’ করে সেগুলো সম্প্রচার করছেন না বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে, ক্লিনফিডের দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের এবং এজেন্টের। কিন্তু কোনো কোনো কেবল অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে এটি পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। অনুমতি ছাড়া ডাউনলিংক করা আইন বহির্ভূত।’

ক’জন কেবল অপারেটরের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরণের আন্দোলনের কথা বলা অযৌক্তিক। যারা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে এবং সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে, সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থবিরোধী, আইনবিরোধী। আমি আশা করবো দেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না। সরকার কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না। দেশের স্বার্থ উর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য, দেশের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। অবশ্যই তারা যদি আলোচনা করতে চায়, আলোচনা হতেই পারে, তারাও এখানে আমাদের সহযোগী। তাদের সাথে অবশ্যই আলোচনা হবে পারে। তবে আলোচনার ভিত্তি হবে আইনমানা, দেশের স্বার্থসংরক্ষণ।’

হাছান মাহমুদ জানান, ক্লিনফিড চ্যানেলের বিষয়ে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম চলমান থাকবে। কোনো কেবল অপারেটর আইন ভাঙ্গলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.