ট্যাক্স ইন্সপেক্টরের জালিয়াতি ও দখলদারিত্বের শিকার দুই বোন

জামালপুর: জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী সরকারের মৃত্যুর পরে তার রেখে যাওয়া স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিস সুত্রে মালিক হন তার স্ত্রী, এক পুত্র ও তিন কন্যা। যে সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকার উপরে।

ওয়ারিশ সূত্রে পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ দখলের কথা থাকলেও ভাই ট্যাক্স ইন্সপেক্টর আল-আমিন বিন মুনসুরের জাল জালিয়াতি ও দখলদারিত্বে অসহায় হয়ে মানবেতর জীপন-যাপন করছেন মনসুর আলী সরকারের দুই মেয়ে সাদিয়া ও জান্নাতুল ফেরদৌস এর পরিবার। অন্য মেয়ে তাহেরাতুল ফেরদৌস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকা ও তার স্বামী স্থানীয় যুবলীগ নেতা হবার কারনে ভাই আল-আমিন বিন মুনসুর তার সম্পত্তি ভোগ দখল করতে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।  

সাদিয়া ও জান্নাতুল ফেরদৌসের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ইসলামপুর উপজেলার পরিষদের নিকটেই তাদের বাবার রেখে যাওয়া ১০৩ শতাংশ জমি রয়েছে যার মধ্যে ২১ শতাংশ জমিতে রয়েছে বসত বাড়ী। যে বাড়ীতে তাদের ভাই আল-আমিন বিন মুনসুর তার পরিবার নিয়ে থাকেন। বাকী ৮২ শতাংশ জমি যেখানে তাদের ২ বোনের নামে ৩৬ শতাংশ জমি রয়েছে যা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সারোয়ার আজম বাবুর সহযোগীতায় ‘প্রতিভা কিন্ডার গার্ডেন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভাড়া প্রদানের নামে দখল করে নেন ভাই আল-আমিন বিন মুনসুর।

এছাড়াও প্রায় ৫ বিঘা জমি একটি ইট ভাটাকে ভাড়া দিয়ে বছরে ৪ লক্ষ টাকা আল-আমিন একাই হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং তার দখলে আরো একটি মার্কেট রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বোন সাদিয়া ও জান্নাতুল ফেরদৌস।

জান্নাতুল ফেরদৌস এই প্রতিবেদকে আরো বলেন আমাদের ২ বোনের স্বামী সরদার ইব্রাহিম ও জাকির হোসেন এবং ভাই আল আমিন বিন মুনসুর একটি যৌথ ব্যবসার প্রতিষ্ঠান দাড় করাতে চাইলে আমাদের পিতা মুনসুর আলী সরকারের লিখিত এর ভিত্তিতে ২৭ অক্টোবর ২০১০ ইং তারিখে ৮৪৯২ নং দলিলে ৮৬ শতাংশ জমি বন্ধকের মাধ্যমে আল- আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৬৩ দিলকুশা শাখা, ঢাকা এর নিকট হতে আমরা ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহন করি।

যা পরবর্তীতে ৪০ লক্ষ টাকা বাদে বাকী সব টাকা পরিশোধ করি। মহামারী করোনাকালের সময় আমাদের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্ধককৃত সম্পত্তিতে ভাই আল-আমিন আমাদের না জানিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের নামে সম্পত্তি দখল করেন। বন্ধককৃত সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় ব্যাংক সকল সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। তবে ব্যাবসা বন্ধ হবার অনেক আগেই ভাইয়ের সরকারি চাকুরি হবার কারনে সে তার টাকা নিয়ে ব্যাবসা থেকে বের হয়ে যায়।

জান্নাতুল ফেরদৌস আরো বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে কেন আমাদের সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে সেটা জানতে চাইলে তখনি বেড়িয়ে আসে ভাইয়ের আসল রুপ। তিনি বলেন ১ আগস্ট ২০১২ ইং তারিখে বাবার সকল সম্পত্তি আমাকে লিখে দিয়েছে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন সেটা কি করে সম্ভব বাবা ২০০৭ সাল থেকে প্যারালাইসড ছিলেন, তিনি কোনোভাবেই পুরো সম্পত্তি লিখে দিতে পারেন না আর যে সম্পত্তি আমরা ব্যাংকে বন্ধক রেখেছি সেটা কি করে বাবা তোমাকে লিখে দিয়েছে বলে ভাইয়ের এই জাল-জালিয়াতি প্রতিবাদ করলে শুরু হয় হুমকি ধামকি এমনকি বেশি ভাড়া ভাড়ি করলে পরিনতি খুব খারাপ হবে বলেও হুমকি দেন ভাই আল-আমিন।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমার ভাই সরকারি চাকুরিজীবী তার সাথে প্রশাসনের অনেকের সাথেই ভালো সম্পর্ক তাছাড়াও ততকালীন স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনেক নেতা ও কিছু দুস্কৃতিকারীর কারনে আমরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। এমতাবস্থায় আমরা ব্যাবসা বানিজ্য সব হারিয়ে ব্যাংক ঋণ সহ অন্যান্য দেনা পাওনা পরিশোধ করতে না পেরে আর্থিক ও মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি।

গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পরে ইউনুস সরকারে দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে ভাবে অন্যায়,অনিয়ম ও এই ধরনের দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিচ্ছেন তা দেখে ভাইয়ের দ্বারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখলকৃত পৈতৃক সম্পত্তি দ্রুতই ফিরে পাবার আশা করছেন অসহায় ভুক্তভোগী মানবেতর জীবন যাপনকারী দুই বোন ও তাদের পরিবার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.