মুক্তির জন্য রসুল (সা.) এর দিকনির্দেশনা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে মাত্র তিন বছর ছিলেন। প্রায় সোয়া লাখ সাহাবির মাঝে তিনি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। যাই হোক, জাতির মুক্তির কী দিকনির্দেশনা নবী করিম (সা.) দিয়ে গেছেন বিভিন্ন সাহাবির কাছে- তা অনেকের জানা। আজ হজরত আবু হুরায়রাকে নবী করিম (সা.) কী দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা আমি আপনাদের শোনাব। আল্লাহর রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, জাতির মুক্তির পথ ছয়টি মূলনীতির মাঝে নিহিত। তিনটি করণীয়, তিনটি বর্জনীয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার যে প্রথম আয়াতগুলো রয়েছে- সেখানেও আল্লাহপাক জাতির মুক্তির ছয়টি পয়েন্ট আলোচনা করেছেন। আল্লাহর রসুল (সা.) যে ছয়টি পয়েন্ট ইরশাদ করেছেন তার মধ্যে এক নম্বর হলো, প্রকাশ্যে এবং গোপনে তাকওয়া এখতিয়ার করা। তাকওয়ার দুই অর্থ- ১. নিজেকে সম্পূর্ণ গোনাহমুক্ত রাখা। চাই তা বিশ্বাসগত গোনাহ হোক, চাই ইবাদতের গোনাহ হোক অথবা লেনদেন, আচার-ব্যবহার বা চারিত্রিক গোনাহ হোক কিংবা ব্যক্তিগত সামাজিক বা জাতীয় পর্যায়ের গোনাহ হোক। মোটকথা সব ধরনের গোনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। সমাজ বা পরিবারকে গোনাহমুক্ত করতে গিয়ে যেখানে লাঠি প্রয়োজন সেখানে লাঠি দ্বারা যেখানে মুখের প্রয়োজন সেখানে কথার দ্বারা গোনাহমুক্ত করতে হবে। ডিম, মধুসহ যাবতীয় দামি দামি খাবার খেলে হবে না, আগে পেট ঠিক রাখতে হবে। কারণ পেট খারাপ হলে ভালো ভালো উন্নতমানের খাবার খেলে পেটের বারোটা বাজবে।
ডায়াবেটিস রোগী যারা, এক সময় প্রচুর খাবার-দাবার খেত, কিন্তু এখন তারা কিছুই খেতে পারে না। যেমন, আমাকে ডাক্তার বলেছে আপনি গরুর গোশত খেতে পারবেন না। আমি বললাম, আমি কী অন্যায় করলাম যে, গরুর গোশত খেতে পারব না? তারা বলে যে, হুজুর সুস্থ থাকার জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমি বললাম, এমন একটা ওষুধ দেন যার দ্বারা এর প্রতিকার হয়ে যায়। বলে যে, হুজুর এমন ওষুধ তো আবিষ্কার হয়নি। বললাম, তাহলে আপনারা ডাক্তার হয়ে কী করলেন? বিজ্ঞান এত উন্নতি করে কী করল? বলে যে, হুজুর! ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি ওষুধ আছে। তাহলো সকাল বেলা ২ ঘণ্টা দৌড়াতে হবে। বললাম, দৌড়ানো তো আল্লাহর পা দিয়ে, আপনি একটা কিছু দেন না। ডাক্তারের এই পরামর্শ মানতে গিয়ে আজকাল মানুষ এশরাকের নামাজ আর কোরআন তেলাওয়াত রেখে দৌড়াতে থাকে। যাহোক বোঝা গেল, কিছু খেতে হলে আগে পেট ঠিক করতে হবে। এমনিভাবে নেক কাজ দ্বারা উপকৃত হতে হলে আগে গোনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। গোনাহ হলো আত্মা বা রুহের রোগ। সুতরাং রুহকে রোগমুক্ত করে সুস্থ করে অতঃপর নামাজ পড়লে এবং ইবাদত করলে সেটা কাজ হবে।
হুজুর (সা.) বলেছেন, গোনাহ থেকে মুক্ত থাকো। পাশাপাশি আরও দুটি শব্দ বলেছেন, প্রকাশ্যে এবং গোপনে, অর্থাৎ উভয় অবস্থায় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকো। এটা এ জন্য বলেছেন যে, অনেক মানুষ প্রকাশ্যে একদম আবদুল কাদের জিলানি। যেমন আপনারা আমার ব্যাপারে ধারণা করছেন, হুজুর মনে হয় এ দুনিয়ার মানুষ নয়, জান্নাত থেকে নেমে এসেছেন। আর আমি জানি আমি কেমন ব্যক্তি। শুধু আমি কেন প্রত্যেক ব্যক্তি জানে যে, সে কেমন ব্যক্তি। ইব্রাহিম তাইমি (রহ.) বলেন, মাঝে মাঝে গভীরভাবে চিন্তা করি, মানুষকে যে ওয়াজ করি; আমার ওয়াজ মানুষ এত গুরুত্ব সহকারে শোনে, কিন্তু মানুষকে যা বলছি, তার ওপর কি আমি আমল করছি?
অনেক বক্তার ওয়াজ শুনলে তো মনে হয় অনেক বড় বুজুর্গ, কিন্তু নিজের বাড়িতে শয়তানকেও হার মানায়। এক বুজুর্গ পথ চলছেন। দেখেন শয়তান রাস্তায় শুয়ে আছে। বুজুর্গ শয়তানকে বলেন, তোমার কাজ তো শুয়ে থাকা নয়। তোমার রাজত্ব এত বড়; তুমি তোমার শাগরেদদেরকে দিকনির্দেশনা দান করবে না? শয়তান বলে যে, কী বলব হুজুর, আজকের ছেলেমেয়েরা মুরব্বিদের থেকেও বেশি বোঝে। সুতরাং আমার শাগরেদরা কলা-কৌশলে আমার থেকে অগ্রগামী হয়ে গেছে। তাই এখন আর আমার প্রয়োজন পড়ে না। আমি শুয়ে শুয়ে সময় কাটাই। অনেক মানুষ বাইরে খুবই বুজুর্গ। কিন্তু খবর নিয়ে দেখেন। যদি বলা হয়, আপনার বিবি কোথায়? বলবে, মার্কেটে না পার্টিতে গেল, বলতে পারছি না। ছেলে-সন্তানরা নামাজ পড়ে তো? বলবে, হুজুর বলি তো পড়তে, কিন্তু পড়ে না হুজুর। অথচ স্কুলে না গেলে খানাদানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জুমার নামাজে না এলে এর জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। এমন ব্যক্তিকে মুত্তাকি বলা যায় না।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।