ব্রেকিং নিউজ

ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে রাজধানীতে গোলটেবিল বৈঠক

পীর সাহেব চরমোনাই’র আহ্বানে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চরমোনাই এর পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে পি আর পদ্ধতি চালু, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় ভক্তরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন –

# বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান
এডভোকেট জয়নুল আবেদীন
জনাব বরকতুল্লাহ ভুলু
# জামায়াতে নায়েবে আমীর
ডাঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের
# বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
জনাব মোস্তফা জামাল হায়দার
# নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও সাবেক ডাকসু ভিপি
জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না
# রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক
জনাব হাসনাত কাইয়ূম
# ঢাবি শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ডঃ নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
# বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক
জনাব সারজিস আলম
# নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী
# এনডিএম চেয়ারম্যান
জনাব ববি হাজ্জাজ
# গণ ফোরাম সাধারণ সম্পাদক
এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী
# এবি পার্টির সদস্য সচিব
জনাব মুজিবুর রহমান মঞ্জু
# জাতীয় দলের চেয়ারম্যান
জনাব সৈয়দ শামসুল হুদা
# মুসলিম লীগের মহাসচিব
জনাব কাজী আবুল খায়ের
# লেবার পার্টির চেয়ারম্যান
ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান
# ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব
মাওলানা ফজলুর রহমান
# গণ অধিকার পরিষদ সাধারণ সম্পাদক
জনাব রাশেদ খান
# গণ অধিকার পরিষদ সদস্য সচিব
ফারুক আহমাদ
# এলডিপির মহাসচিব
শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামের আন্দোলনের আমির বলেন,
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস গত ১৮ আগস্ট বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, পাঁচটি খাতে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন।

পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুই দফায় মোট ১০ টি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন গঠন করে। আমরাও মনে করি, এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, বিগত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে, তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।

অতএব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও প্রক্রিয়া কি হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।

সম্মানিত নেতৃবৃন্দ।
আপনারা জানেন পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ৩টি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো
ও ডামী নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে, তারাও সমান অপরাধী।

অতএব, ৩টি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী ৩টি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশিলব ছিল, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে।

সম্মানিত নেতৃবৃন্দ।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, অকাতরে জীবনদান, সীমাহীন ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব জাতিকে এক দানবীয় শক্তির কবল থেকে মুক্ত করেছে। আমাদের অকুতোভয় দামাল সন্তানেরা শুধু ক্ষমতার হাতবদলের জন্য এতো জীবন দেয়নি, এতো রক্ত ঝরায়নি। আমরা তাদের চোখের আকুতি, মুখের ভাষা এবং দেয়ালের গ্রাফিতি দেখে বুঝতে পারছি তারা আমাদের অতীত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাস্তির সমাজ এবং কল্যাণরাষ্ট্র চায়।

আমাদের সন্তানদের স্বপ্নের সেই সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানে আমরা সকল রাজনৈতিক শক্তি যদি আন্তরিক না হই তাহলে তারা আমাদের ক্ষমা করবে না। অতএব, আমাদের এখন মৌলিক কিছু বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে স্বপ্নের নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রয়োজনে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে এ মুহুর্তে মৌলিকভাবে দু’টি বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠতে পারে।
০১। পতিত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
০২। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

এ ক্ষেত্রে ইসলমী আন্দোলন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থার দাবী জানিয়ে আসছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও আমরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা PR পদ্ধতির নির্বাচন বিষয়ে জোড়ালো দাবী জানিয়ে ছিলাম। তখন যদি এ পদ্ধতি চালু করা হতো তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগের মতো একটি দল এভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ পেত না। আশার বিষয় হলো, এখন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটির বেশির ভাগই সাংখ্যানুপাতিক তথা PR পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবী জানাচ্ছে।

আমরা যদি প্রত্যেকটি ভোটের যথাযথ মূল্যায়ণ করতে চাই, সম্মানিত প্রত্যেক ভোটারের প্রতিনিধি যদি আমরা জাতীয় সংসদে দেখতে চাই আর জাতীয় সংসদকে যদি আমরা সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করতে চাই তাহলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতিই আমাদের জন্য একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাপক জনমত তৈরী প্রয়োজন। এ অনুষ্ঠানও জাতীয় ঐক্যমত তৈরীর একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।সবাইকে মুক্ত আলোচনার আহবান জানিয়ে শেষ করছি।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম
আমীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

Leave A Reply

Your email address will not be published.