আজ ঢাকায় আসছেন আনোয়ার ইব্রাহিম

ঢাকা: বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজারের মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছে। ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন তারা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই সফরের মধ্য দিয়ে ভিসা জটিলতার অবসানসহ শ্রমবাজার আরও বড় হবে এটাই আশা করছেন তারা।

প্রায় এক দশক পর সংক্ষিপ্ত সফরে আজ শুক্রবার ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি হবে কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর।

এ ছাড়া আনোয়ার ইব্রাহিমই প্রথম সরকার প্রধান, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানান। ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান সফর শেষে আনোয়ার ইব্রাহিমের দুপুর ২টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আবার আজ রাত ৮টার দিকে তিনি ঢাকা ছাড়বেন বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্মবিষয়ক উপমন্ত্রী, পার্লামেন্টের দুজন সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা থাকবেন।

বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক করবেন। পরে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে আলোচনা করবেন, যেখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সম্পর্কিত বিস্তৃত বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকায় অবস্থানকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টেলিফোনে স্বাগত জানান ও শুভেচ্ছাবিনিময় করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। একই সঙ্গে তিনি নবগঠিত সরকারকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

সেদিনই প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আনোয়ার ইব্রাহিম তা গ্রহণ করেন। এরপর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারি সফরে আসছেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সফরের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই নিজেদের নানা প্রত্যাশার কথা জানান দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা। এ ক্ষেত্রে অবৈধ প্রবাসীদের বৈধতা দেওয়া ও বাংলাদেশিদের মাল্টিপল ভিসা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা প্রবাসীদের।

প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২৩ লাখেরও বেশি বৈধ সাধারণ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে মালয়েশিয়ায়। যার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশি শ্রমিক, এ সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। এ ছাড়া দেশটির পাঁচটি কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ খাতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশিরা।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিরা জানান, সাধারণ কর্মী ভিসার ক্যাটাগরিতে অন্যান্য দেশের কর্মীরা মাল্টিপল ভিসা পেলেও বাংলাদেশিরা পান সিঙ্গেল এন্টি ভিসা। এমনকি ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরাও পান মাল্টিপল ভিসা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই বৈষম্যের সমাধান করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

মাল্টিপল ভিসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে একজন প্রবাসী বলেন, মাল্টিপল ভিসা না থাকার কারণে বছরে একবারের বেশি দেশে ফিরতে হলে আলাদা অনুমতি নিতে হয়। আর এজন্য গুনতে হয় আলাদা ইমিগ্রেশন ফি। প্রবাসীরা জানান, ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈষম্যের নিরসন চেয়ে হাইকমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়ানোর বিষয়েও কথা বলেছেন তারা।

মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মূল দাবি মাল্টিপল ভিসা। একই সঙ্গে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে মালয়েশিয়ায় অবৈধ কয়েক লাখ বাংলাদেশির বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সফরে যা গুরুত্ব পাবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের বিভিন্নমুখী সম্পর্ক রয়েছে। সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আমাদের শ্রমশক্তির বিষয় আছে। আবার এগুলোয় সমস্যাও আছে। আমরা চেষ্টা করব সব সমস্যা দূর করার।’

তিনি বলেন, আগামী বছর আসিয়ানের চেয়ারম্যান হবে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ চায় ওই জোটের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সহায়তা করুক। এ ছাড়া রোহিঙ্গা বিষয়ে মালয়েশিয়া সব সময় সহানুভূতিশীল এবং বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের যাত্রা শুরু। গত ৫ দশকে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার বিদেশিকর্মী চাহিদার প্রায় অর্ধেকই পূরণ করছে বাংলাদেশ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.