ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্তের পরই রাকসু নির্বাচন: রাবি উপাচার্য
রাজশাহী ব্যুরো : ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই রাকসু নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বা রাজনীতির বিষয়ে যে মতামত তৈরি হয়েছে, এগুলো আমার কাছে মনে হয় না রাজনীতির বিরুদ্ধে মতামত। দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক চর্চা ছিল, সেটাকে আসলে রাজনীতি বলা যাবে না। সেটা মাফিয়াতন্ত্র ও সিন্ডিকেট। রাজনীতির নামে যা হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক, রাজনৈতিক ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসব। সবকিছু নিয়ে আমরা একটা ফ্রেমওয়ার্ক দাঁড় করাতে চাই। তারপরেই আমরা সোজা রাকসুর (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) দিকে মুভ করব। আমি এ বিষয়ে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘বর্তমানে পাঠদান ও পরীক্ষায় সেমিস্টার পদ্ধতি চলছে। অনিবার্য কারণে যে সেশন জটের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারে একটা সভা হয়েছে। সেখানে গুরুত্বের সঙ্গে সেশনজট কমানোর বিষয়টি দেখা হয়েছে। বিভাগগুলোকে একাডেমিক ক্যালেন্ডার বানিয়ে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
আবাসিক হলের ব্যাপারে অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দের বিষয়টি বিধিবদ্ধ নিয়মে করার প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া হলে খাবারের মান উন্নয়নের বিষয়েও কর্তৃপক্ষ হল প্রশাসনের সঙ্গে মিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।’
সম্প্রতি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আগামীকাল থেকেই একটা শক্তিশালী যৌন নিরাপত্তা সেল কাজ শুরু করবে। আমরা কোন মানুষের অনর্থক অসম্মান যেমন চাই না, তেমনি কেউ যদি এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই তাঁকে এর ফল ভোগ করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রকল্পে সীমিত পরিসরে কাজ চলছে, আবার কিছু জায়গায় বন্ধও রয়েছে। কোনো নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তা যাচাই-বাছাই করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া কামারুজ্জামান হলের দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আমরা পুনরায় বসব।’
দায় নেওয়ার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করে পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, ‘পরিবর্তন এসেছে। তবে সব জায়গায় কাঠামোগত পরিবর্তন আসেনি। আমাদের সময় দিতে হবে। আমরা সবই করতে চাই। তবে তড়িঘড়ি করে কোনো সমাধান করলে তা কল্যাণকর হবে না। দায় নেওয়ার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতায় গণমাধ্যম কর্মীদের ওপরে প্রশাসনের তরফ থেকে বাঁধা সৃষ্টি করা হবে না। যদি কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়, শুধু আমার কান পর্যন্ত পৌঁছে দিলেই হবে। আমি এগুলো বরদাশত করব না। আপনারা আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। ইতিবাচক-নেতিবাচক সংবাদ দেশে ছড়িয়ে দেবেন।’
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দোকানে ছাত্রদের বাকি খাওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এটি একটি উপসর্গ, কোথাও অপরাজনীতি চলতে থাকলে এটি থাকে। যেখানে অপরাজনীতি নেই সেখানে বাকি খাওয়ার কোন কালচারও নেই। একটা বিপ্লবের পর মানুষ রাতারাতি তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না। কিছু কিছু শুভ পরিবর্তন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমি প্রক্টর মহোদয়কে বলব স্টেট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে একটা ডেটাবেইস তৈরি করার জন্য, কোন কোন দোকানে এখনো এই সংস্কৃতি চালু আছে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামানিক, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।