ব্রেকিং নিউজ

দুই হাতে গুলি চালানো যুবলীগ নেতা রুবেলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি চালানো চিহ্নিত যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রুবেলকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক ফয়সল তারেক এ আদেশ দেন।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে আদালত হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন প্রার্থনা করেন বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, র্যাব গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা থেকে রাজশাহীতে আনে শনিবার গভীর রাতে। রাতে সেখানেই রাখা হয়। সেখান থেকে সকালে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে র্যাব। এর পর তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শুনানী শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রুবেলের নামে থানায় হত্যা, হত্যার চেষ্টা, অস্ত্র লুট ও বিস্ফোরক দমন আইনে ৬টি মামলা রয়েছে। ছয়টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাকে। তবে ৫ আগস্ট গুলি করে আলী রায়হান হত্যা মামলায় রুবেলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এখন থানা হেফাজতে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এর আগে , ৫ই আগস্ট যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রুবেলকে রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি মোড়ে হেলমেট পরে দুই হাতে দুটি অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে দেখা যায়। তার সঙ্গে আরও তিনজনকেও অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা গেছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন।

উল্লেখ্য, রুবলকে শুক্রবার রাত পৌনে ১টার দিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি দল। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় র‌্যাব মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানিয়েছিলেন গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণকারী জহিরুল ইসলাম রুবেলকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ আগস্টের ঘটনায় করা দুটি হত্যাসহ একাধিক মামলায় আসামি রুবেল। এ মামলায় রাজশাহী সিটি করপোনেশনের সাবেক মেয়র লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ২৬০ জন আসামি রয়েছে।

রুবেলের বাড়ি রাজশাহী নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্ডীপুর এলাকায়। গত সিটি নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।

নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় রুবেলের ছিল দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন রুবেল। হাফ ডজন মামলার আসামি হয়েও ২০২৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে শক্তিশালী শুটার বাহিনী গুলির্বষণ করে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রুবেল।

ওইদিন দুপুরে তালাইমারি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেববাজারের দিকে এগোতে থাকেন। তারা শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় পৌঁছলে রুবেলের নেতৃত্বে শ্যুটার বাহিনী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুবেল মাথায় হেলমেট দুই হাতে দুই পিস্তল নিয়ে সমান তালে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছেন। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান নিহত হন। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি রুবেল। হাসিনা পালানোর পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে রুবেলও গা ঢাকা দিয়েছিলেন। শনিবার তাকে কুমিল্লা থেকে আটক করে র‌্যাব।

২০১৮ সালের এপ্রিলে রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লা থেকে রুবেল ও তার এক সহযোগীকে পিস্তল ও ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছিল কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ। রুবেলের আরেক ভাই ডাবলু ২০১৩ সালে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার মায়া বাহিনীর প্রধান মাহফুজের গুলিতে নিহত হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য ভাইয়ের খুনের বদলা নিতে মায়া বাহিনীর প্রধান মাহফুজকে খুন করে রুবেল। তবে মাহফুজের পরিবারের কেউ মামলা না করায় সেই হত্যায় মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যান রুবেল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.