ব্রেকিং নিউজ

সবুজের সমারোহ ‘দার্জিলিং টিলা’ হাতছানি দিয়ে ডাকছে

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি’:
চারদিক প্রকৃতির সৌন্দর্যের সমারোহ প্রকৃতির কলতানে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান আর চারপাশে সবুজের চাতর। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সবুজের সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা ও টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট্ট ছোট্ট জনপদ। দুটি পাতা একটি কুঁড়ি দেশখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি অন্যতম পর্যটন নগরী। পাহাড়,অরণ্য,পাখির অভয়ারণ্য, হাওর, চা-বাগান আর উঁচু-নিচু টিলাবেষ্টিত সবুজ চাদরে ঢাকা শ্রীমঙ্গলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে প্রতিনিয়তই মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দার্জিলিং টিলা। শ্রীমঙ্গলের এমআরখাঁন চা বাগানের অনিন্দ্য সুন্দর ‘দার্জিলিং টিলা’ আগত পর্যটকদের মাঝে শ্রীমঙ্গলের ‘শ্রী’ আরও বৃদ্ধি করেছে। এমআরখাঁন চা বাগান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত মনোরম ও উপভোগ্য দর্শনীয় একটি স্থানে পরিণত হতে পারে। নীলাভ সবুজ চা এর সমারোহে যে কেউ গেলেই সবুজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে নিতে চাইবে। প্রকৃতির প্রায় সব রূপ-রং যেন এখানে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সৃষ্টিকর্তা যেন সৃষ্টির সৌন্দর্যে কোন কমতি রাখেনি। বিশাল এই সবুজের ভিড় কার না ভালো লাগবে? বিকেলের ফুরফুরে বাতাসের সাথে এমন সবুজে ঘেরা স্থানে কাটানো মুহূর্ত অনেকটা আলাদা হয়েই স্মৃতির এলবামে স্মরণ হবে পরবর্তী সময়গুলোতে। শুধু স্থানীয়দের ভিড়ই না, জায়গাটি অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকদেরও আকর্ষণে করেছে। তাই সারা বছরই পর্যটকদেরও আনাগোনা থাকে এ জায়গাটিতে। ছুটির দিনে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকায় অবস্থিত এমআর খাঁন চা বাগানের ৭ নং সেকশনে দার্জিলিং টিলা’র অবস্থান। সবুজের সমারোহে মুগ্ধতা ছড়ানো দৃষ্টিনন্দন এ টিলা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের সম্মীলিত হয় যেন এখানেই। এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার এম আর খান চা বাগান। যেখানে রয়েছে ছবির মতো চা-বাগান। চতুর্দিকে সবুজ গাছগাছালি। দৃষ্টিজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। দেখতে অনেকটা দার্জিলিং এর চা-বাগানের মতো। সবুজের সমারোহ, চা-বাগানের আঁকাবাঁকা পথ, ঢেউ খেলানো সমান্তরাল রাস্তা নিমেষেই যে কারও বিষণ্ন মনে প্রশান্তির ঢেউ এনে দিতে পারে। সবুজ গালিচা মোড়ানো চা-বাগানের প্রকৃতির এমন সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা।
স্থানীয় লোকজন এই টিলার নাম দিয়েছেন “দার্জিলিং টিলা”। তাঁরা জানান, এই টিলা এবং চা বাগানটি দেখতে দার্জিলিং এর মতো। তাই পর্যটকদের কাছেও এটা “দার্জিলিং টিলা” নামেই অধিক পরিচিত। এমআর খান চা-বাগানে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোড পেট্রল পাম্প চত্বর থেকে রাধানগর হয়ে মহাজেরাবাদের সিএনজি অটোরিক্সায় উঠে এমআর খানের রাস্তায় নেমে এক থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আর রিজার্ভ নিলে এমআর খানের দার্জিলিং টিলায় সরাসরি গাড়ি এবং মটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে। এ টিলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। অন্যান্য দিনের ন্যায় ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এমআর খান চা বাগানের বাসিন্দা দ্বীপ বুনার্জি জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ এই চা বাগান এবং দার্জিলিং টিলা দেখতে আসেন। বিশেষ করে ঈদ, ছুটি এবং শীতের শুরুতে এখানে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। নয়নাভিরাম এ টিলা দেখতে কমলগঞ্জ থেকে আগন্তুক অভিষেক দাশ স্বপ্নীল বলেন, অসাধারণ একটি সুন্দর স্পট। নিজ চোঁখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ভেতরের দার্জিলিং এর মতো দৃষ্টিনন্দন জায়গা আছে। টিলা দেখতে আসা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের মাস্টার্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তন্তু দেবনাথ বলেন চা বাগান আর টিলার অপরূপ সৌন্দর্যে ভীষণ মনোমুগ্ধ। যেকোনো দর্শনার্থী মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।
তারা আরও বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অন্যতম একটি স্পট এই দার্জিলিং টিলা। মনজুড়ানো চা-বাগান আর টিলার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই জায়গায় কেউ না আসলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাকে বুঝানো যাবে না।
এমআর খান চা-বাগানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এমআর খান চা বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ চমৎকার। বিশেষ করে এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। এটি দেখার জন্য বিভিন্ন সময় মানুষ ঘুরতে আসেন। পর্যটকদের রেস্ট এবং বসার জন্য এখানে বেশ কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে টুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গলের ওসি প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, শ্রীমঙ্গল অন্যতম একটি পর্যটন শিল্পাঞ্চল।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যাতে সুন্দর এবং নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে। পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.