খুঁড়িয়ে চলছে দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে (টিএসসি) শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই শূন্য আছে।
৮-১০ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। এছাড়া জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। বিভিন্ন টেকনোলজি ও কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি নেই।
আবার ল্যাবরেটরি থাকলেও তাতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থী আগের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। বিপরীত দিকে তিনটি সেশনে ১৫০ মিনিট ক্লাস হওয়ার কথা।
কিন্তু ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি ও যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে সব ব্যাচ একত্র করে ৩০-৩৫ মিনিট ক্লাস নেওয়া হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে শিক্ষা পাচ্ছেন না। কোনোভাবে সিলেবাস শেষ করে শিক্ষার্থীদের পাশের সনদ দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে পড়বে। ডিপ্লোমা শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও কমে যাবে।
বুধবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমলাতন্ত্রকে দায়ী করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করে নয় দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর অংশ হিসাবে ২২ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় সমাবেশ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুর রহমান। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার একেএমএ হামিদ। উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম আব্দুল মোতালেব, যুগ্মসম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ, সহ-জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক জিএম আকতার হোসেন প্রমুখ।
শামসুর রহমান বলেন, দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের ৮৫ শতাংশই সম্পন্ন হয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে। কিন্তু তাদের দমিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিধিবিধান করা হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ২০২০ সালের জাতীয় বিল্ডিং কোড এবং ২০০৮ সালের ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অন্যতম। বিধিমালার সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ইঞ্জিনিয়ার’ স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি। আবার আগে চারতলা ভবন পর্যন্ত নকশা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা করতে পারতেন। তখন তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি ছিল। এখন চার বছর মেয়াদি ডিগ্রি। তাই পাঁচতলা ভবন পর্যন্ত নকশার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিধিতে এটা কেবল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে যারা নির্দিষ্ট কোর্স করে থাকেন, কেবল তারাই পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উপেক্ষা করা হয়েছে, আরেকদিকে একটি নির্দিষ্ট পেশার কাছে ভবন নির্মাতাদের জিম্মি করার রাস্তা পাকাপোক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বঞ্চনার কথা প্রধানমন্ত্রী জানেন। এ কারণে তিনি ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আইডিইবির ৫টি সম্মেলনে সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত ফাইলও উঠেছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্বার্থবিরোধী নীতি জারি করা হয়েছে। সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তির অদৃশ্য ইশারায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো-বিএনবিসি-২০২০ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিশেষ ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতির কোটা ৩৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা; সার্ভিস রুল অনুযায়ী পদোন্নতি, কনসেপ্ট অনুযায়ী অর্গানোগ্রাম এবং প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরতদের ন্যূনতম বেতন ও পদবি নির্ধারণ করা; ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর রাখা, পলিটেকনিক ও টিএসসিতে তীব্র শিক্ষক সংকট দূর এবং ২৯টি ইমার্জিং টেকনোলজির বেকার ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ হেলাল উদ্দিন © সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত
Copyright © 2023 স্বাধীন বাংলা নিউজ | তথ্য মন্ত্রনালয় নিবন্ধন নং-১৭৯