ব্রেকিং নিউজ

সভ্যতা, সংস্কৃতি, মনুষত্ব ও মানব সমাজকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সুশীল, সুলেখক ও বুদ্ধিজীবীদেরকে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের।

ভালোবাসা শব্দটি পবিত্র। প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এসব মানবিক গুণাবলী আছে বলেই এখনো টিকে আছে এ নশ্বর পৃথিবী। ভালোবাসা হলো খোদাই অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি ও মনের প্রশান্তি।ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি যা মানুষের মনের গভীরে প্রবাহিত হয়। ভালোবাসা সব সৃষ্টির মাঝেই আছে। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার জন্যই মহান আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।ভালোবাসার কারণেই একজন শ্রদ্ধেয় মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। বাবা অনেক পরিশ্রম করে সন্তানকে মানুষ করেন। ভালোবাসার কারণে বনের বন্য প্রাণীরাও তাদের নিজস্ব প্রজাতি নিয়ে একসাথে বসবাস করে। প্রেম সৃষ্টিকর্তার একটি মহান উপহার। কিন্তু ভালোবাসার জন্য কোনো মুহূর্ত, দিন বা রাতের প্রয়োজন নেই। প্রেমের স্রোত সর্বদা প্রবাহিত হয়। প্রেমে যখন পার্থিব বাসনা থাকে না, তখন সেই ভালোবাসার মাধ্যমেই মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জণ করা যায়।
অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে সারা বিশ্বে যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটে যাচ্ছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রাশ্চাত্যে ভ্যালেন্টাইন ডে নামক বেহায়া দিবসটি শত শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসলেও আমাদের দেশে কিন্তু এর বিশবাষ্প ছড়িয়েছে বহু পরে। আমাদের দেশে দিবসপ্রিয় একজন সাংবাদিক তার নাম শফিক রেহমান। সে ১৯৯৩ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে দিবসটির আমদানি করে। বাঙালিদের একটি নতুন দিবসের সাথে মূলত সেই প্রথমে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে সে একটু চালাকি করে দিবসটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে নাম না দিয়ে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ হিসেবে বিবৃত করে।
এতে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে দিবসটি প্রিয় হয়ে উঠে। শফিক রেহমানের অনুকরণে অন্যান্য পত্রিকাগুলোও শুরু করল দিবসটি নিয়ে আলাদা আয়োজন। পূর্ণ কভারেজ দিতে থাকল ভালবাসা দিবসকে। এভাবে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ভালোবাসা দিবস।
দিবসটি যদিও পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ, যদিও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তবুও আমাদের তথাকথিত মিডিয়াগুলো তরুণ প্রজন্মকে মুসলিম ও বাঙালি সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের তরুণ-তরুণীদের সামনে দিবসটিকে এতো লোভনীয় আকারে উপস্থাপন করছে যে, এর ফলে অনেক রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানরাও এ দিন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । আবার অনেকে জেনে বুঝেও শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণে এ দিবসটি নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করে থাকে। তারা ১৪ ফেব্রুয়ারির কয়েকদিন আগ থেকে শুরু করে তার কয়েকদিন পর পর্যন্ত এ দিবসকে ঘিরে নানা রকম প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন কোম্পানী এ দিবস উপলক্ষে নানা অফার দিয়ে তরুণদেরকে আকর্ষণ করে। বড় বড় হোটেলগুলোর হলরুমে তারুণ্যের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিত করা হয় হলরুমের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইফ ব্যান্ড, কনসার্ট এবং উদ্দাম নাচ। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্তঅংশগ্রহণ থেকে বাদ যায় না। আগতদের সিংহ ভাগই অংশ নেয় সে নাচে। এভাবে নাচতে নাচতে হায়া-মায়া, সভ্যতা-শালীনতা সব হারিয়ে আমাদের প্রজন্ম ধ্বংস করে দিচ্ছে ।
এ প্রেম খেলায় মেতে উঠে আমাদের সভ্যতার ভিত ধসে গেছে। মানুষের সমাজ পশুর সমাজে পরিণত হয়েছে। আবার প্রেমিক খুন করছে তার প্রেমিকাকে। এসিডে ঝলসে দিচ্ছে প্রেম প্রত্যাহারের কারণে অসংখ্য তরুণীকে। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মগজে পচন ধরেছে। তারা জাতির এ করুণ দশা দেখেও আমাদের মানব সমাজের ধ্বংসাত্মক পরিণতি উপলব্ধি করে না। সুকৌশলে আমাদের যুব সমাজের চরিত্রে আঘাত করেছে প্রেমকে পবিত্র আখ্যা দিয়ে। লেখা-লেখিতে, বক্তব্য-বিবৃতিতে বিশ্ব ভাসবাসা দিবস নামে বেহায়া দিবসকে উস্কে দিয়েছে। এদেরকে বুদ্ধিজীবী বলা যায় না। এরা মানবতার শত্রু। সভ্যতার দুশমন।
সভ্যতা, সংস্কৃতি, মনুষত্ব ও মানব সমাজকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সুশীল, সুলেখক ও বুদ্ধিজীবীদেরকে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। সরকার ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে বেহায়াপনা ও বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কঠিনভাবে।
ইশতিয়াক মু আল আমিন
সেন্ট্রাল মেম্বার, মিডিয়া উইং
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন

Leave A Reply

Your email address will not be published.