স্বামী মারা যাওয়ার পর ফাতেমা আক্তার সংসার ও দুই মেয়ের পড়াশোনা চালাতেন টিউশনি করে। কিন্তু তিনিও একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সংসারের হাল ধরে তার মেয়ে আদনা সামাঈন (১৮), শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং। খিলগাঁওয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকে সে। এসএসসি পরীক্ষায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে এবার পেয়েছে জিপিএ ৫। জীবনযুদ্ধের মাঠে এমন সাফল্যে ভীষণ উচ্ছ্বসিত সে।
উচ্ছ্বসিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্য ছাত্রীরাও। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানে এবার পাসের হার ১০০ শতাংশ। এ বছর এখান থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক হাজার ৯৫৩ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল মাত্র পাঁচজন। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৬৩৩ জন।
রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন কলেজেও এবার পাসের হার ১০০ শতাংশ। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরাও সারাদিন উল্লাসমুখর সময় কাটিয়েছে।
চোখেমুখে আনন্দের হাসি ছড়িয়ে জীবনযুদ্ধের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী আদনা সামাঈন জানায়, করোনার পুরো সময়টাই তার কেটেছে বাসায়, রুমের ভেতর। মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় একসময় মনে হয়েছিল পড়াশোনা আর হবে না। কিন্তু হাল ছাড়েনি।
আদনা বলে, ‘অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করেছি; লেখাপড়াও চালিয়ে গেছি। অনলাইনে শিক্ষকদের ক্লাস নোট নিয়েছি, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছি। জেএসসি পরীক্ষায় ফল ভালো করতে পারিনি। এজন্য গোল্ডেন জিপিএ ৫ আর পাওয়া হয়নি। এসএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত বিষয়ের পরীক্ষা রাখলে ভালো হতো।’ তার পরও অটো পাস না দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফল দেওয়ায় উল্লসিত তিনি। ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছা তার।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার জানান, সরকারের প্রচেষ্টায় করোনা টিকা দেওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা দেড় বছরের বেশি সময় ক্লাসের বাইরে ছিল। অনলাইন ক্লাস নিলেও ক্লাসরুমের পরিবেশ পায়নি তারা। তারপরও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা অনেক ভালো ফল করেছে বলে মনে করেন তিনি।
উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা, অভিভাবক দিলদার সুলতানা বলেন, করোনার পরে অটো পাস না দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফল প্রকাশ করায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই খুশি। তার মেয়ে নাদিবা ইসলাম সোহা গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়ের পরীক্ষার ফল দেখতে এসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৪ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী শামীমা আক্তার। তার ছোট মেয়ে সানজিদা আফরোজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে জেনে উচ্ছ্বসিত তিনি। সব বিষয়ে পরীক্ষা নিলে ভালো হতো বলে সমকালকে জানান তিনি।
তেহজীবা আফনান অর্থি জিপিএ ৫ পেয়েছে মানবিক বিভাগ থেকে। সে বলে, স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাসগুলো নিয়মিত করেছি। পরীক্ষায় বিষয় কমিয়ে দেওয়ায় এক অর্থে সুবিধাও হয়েছে। না হলে এই সংক্ষিপ্ত সময়ে সিলেবাস শেষ করতে পারতাম না।
মাইলস্টোন কলেজেও আনন্দের জোয়ার :মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে এক হাজার ৬৩১ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের সবাই পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৯৭ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৫ অর্জনের হার ৬১.১৩ শতাংশ। এখানে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল এক হাজার ৩৮৫ জন। জিপিএ ৫ অর্জন করে ৯৬৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৪৬ জন। জিপিএ ৫ অর্জন করে ২৯ জন।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামালউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা পুরো শিক্ষাবর্ষে একসঙ্গে চলেছি এবং সেরা ফল অর্জনের দিকে এগিয়ে গিয়েছি।