ব্রেকিং নিউজ

সেই শওকত বললেন, ‘চাইলে ১০টি মোটরসাইকেল নিতে পারি’

সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডায় ‘মামলা দেওয়ায়’ নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রতিবাদের ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়।

সোমবারের (২৭ সেপ্টেম্বর) ওই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর তা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল ও চালক শওকত আলম সোহেলকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর থেকেই সেই মোটরসাইকেল চালককে ‘ক্ষতিপূরণ হিসেবে’ এবং ‘মানবিকতার জায়গা’ থেকে মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে। এরমধ্যে আছেন শিক্ষক, প্রকৌশলী এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী।

তারা সবাই শওকত আলমের সাথে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু শওকত আলম কারো কাছ থেকেই মোটরসাইকেল নিতে চান না। শুধু মোটরসাইকেল না, কোনো প্রকার সহযোগিতাই তিনি নিতে চান না। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তিনি তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন বলে সময় সংবাদকে জানান।

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শওকত আলম সোহেলের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

এসময় তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা মোটরসাইকেল দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি তো মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য আগুন দেইনি। আমি আগুন দিয়েছি প্রচলিত সিস্টেমকে বদলাতে। পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে রাইড শেয়ার অ্যাপসভিত্তিক যে অরাজকতা চলছে, আমি এই সিস্টেমের পরিবর্তন চাই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমি যদি মোটরসাইকেল নেই তাহলে দেশের কোনো পরিবর্তন হবে না। আজকে আমি ভুক্তভোগী হয়েছি, কালকে আরেকজন হবে। কিন্তু এভাবে তো একটি সিস্টেম চলতে পারে না। পুলিশের এই স্বেচ্ছাচারী মামলা যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন আমি প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’

‘এখন চাইলে ১০টি মোটরসাইকেল নিতে পারি’ জানিয়ে শওকত আলম বলেন, ‘অনেক মানুষ আমাকে মোটরসাইকেল দিতে চাচ্ছে, আমি চাইলে ১০টি মোটরসাইকেল নিতে পারব। তারা সবাই উপহারের কথা বলছে, কিন্তু সিস্টেম বদলানো নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না।’

‘আমি তাদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামলে কালকে আবারও একইভাবে মামলা দেওয়া হবে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকবে। তাহলে কোনো সমাধান তো আসল না। আমি মোটরসাইকেল চাই না, একটি সিস্টেমের পরিবর্তন চাই, যাতে কেউ হয়রানি না হয়।’

রাইড শেয়ারিং অ্যাপস ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সমালোচনা করে শওকত আলম সোহেল বলেন, ‘আমার রাগ পুলিশের ওপর না, রাগ রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ওপর। অ্যাপ ব্যবহার করে যা আয় করি তার বেশিরভাগই তারা নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি পেটের দায়ে রাইড শেয়ারিং করি। কিন্তু যা আয় করি তা যদি মামলার জরিমানা হিসেবে দেই, তাহলে সব কাগজপত্র ঠিক রেখে লাভ কি। তাই রাগ থেকে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছি।’

এদিকে ময়মনসিংহের আনসারুল হক নামে একজন স্কুল শিক্ষক সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুক্তভোগী শওকত আলমকে একটি মোটরসাইকেল উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

তবে আনসারুল হক দাবি করেন, ‘শওকত আলমের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি আমাদের উপহার গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনিও একইভাবে সিস্টেমের পরিবর্তনের কথা আমাদের জানিয়েছেন। বলেছেন, আমি মোটরসাইকেল নিলে মানুষ বলবে আমি একটি পাওয়ার জন্য পুড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি সিস্টেম বদলাতে ক্ষোভ থেকেই এটা করেছি। তাই শুরুতে তিনি উপহার নিতে চাননি। পরে, অনেক বুঝানোর পর তিনি রাজি হয়েছেন।’ তার জন্য মোটরসাইকেল কেনা হয়ে গেছে বলেও জানান এই শিক্ষক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.