ব্রেকিং নিউজ

প্রকাশ্যে আমলা-রাজনীতিবিদ দ্বন্দ্ব!

প্রতিবেদনটির শিরোনামেই দ্বন্দ্বের গন্ধ আছে। বেশ কিছুদিন হলো দেশে প্রায় নানা ইস্যুতে যেন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আমলা-রাজনীতিবিদরা। অবশ্য এই প্রচারণা যে একেবারে নতুন সেটা কিন্তু বলা যাবে না। এটা অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। তবে সম্প্রতি বরিশালে ইউএনওর বাসভবনের সংঘাতে ছড়িয়েছে উত্তাপ। এছাড়াও মহামারি করোনাভাইরাসের সময় জেলায় জেলায় সচিবদেরকে দায়িত্ব দেয়ার পর আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। এসব ক্ষেত্রে উভয়পক্ষই নিজের সহকর্মীদের পাশে পাচ্ছে। বিপরীতপক্ষের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে সীমালঙ্ঘনের অভিযোগ। খবর ডয়েচে ভেলের

খবরে বলা হয়, দেশের সংবিধানে নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনীতিবিদরা থাকেন দুটিতে। প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রিসভার পাশাপাশি চার স্তরের স্থানীয় সরকার-সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে নির্বাহী বিভাগে। জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার হলেও এর নির্বাহী কর্তৃত্ব খুবই কম। এই নির্বাহী বিভাগেই কাজ করে আমলাতন্ত্র।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের মতে, এখানে নির্বাহী বিভাগের অনেক অংশ আছে। সামরিক বাহিনী আছে। বেসামরিক প্রশাসনের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

রাজনীতিবিদদের কাজের দ্বিতীয় জায়গা আইন বিভাগ। সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তারা আইন সভায় যান। সেখানে তৈরি করেন আইন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ হওয়ার কথা এখানেই।

সম্প্রতি নির্বাহী ও আইন উভয় জায়গায় থাকা ব্যক্তিদের সাথেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে আমলাতন্ত্র। তবে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদারের মতে, মাঠ পর্যায়ে এই দ্বন্দ্ব মূলত আমলাতন্ত্রের একটা ক্যাডারের সাথে। প্রশাসন ক্যাডার।

বরিশালে সংঘাত

সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ-আনসারদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত এই ঘটনা দাঁড়িয়ে যায় বরিশাল সিটি মেয়র বনাম ইউএনওতে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে গুলি বর্ষণের অভিযোগ করে। মেয়রের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় বাদী হন ইউএনও মুনিবুর রহমান। আবার মেয়রপক্ষের মামলার আসামি তিনি।

সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে। তাই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই তার পক্ষে দাঁড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে ইউএনও মুনিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সমসাময়িক শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা তার জন্য সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়। তবে তার পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে এগিয়ে আসে সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

তবে তাদের বিবৃতিতে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ শব্দমালা ব্যবহারের কারণে এটা বুমেরাং হয়ে যায়। এর সঙ্গে সচিবরা একমত নন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যদিও বিবৃতিটি একজন সচিবের স্বাক্ষরেই এসেছিল।

জেলায় জেলায় সচিব, সংসদে উত্তাপ

মহামারি করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ে ৬৪ জেলায় সচিবদেরকে দায়িত্ব দেয়ার পর গত জুন মাসে এই ইস্যু উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় সংসদেও।

ওই দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব কাজ, ম্লান হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, তাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জেলার দায়িত্ব পেতো মন্ত্রীরা। এখন সেটা আমলারা নিয়ে নিয়েছে।

একই দিন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশ চালাচ্ছে জগৎশেঠ আর আমলারা। রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে।

জেলায় জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, যে কাজটা আমলাতন্ত্র করছে, সেটা তাদেরই করার কথা। সংসদে যে আলোচনা হয়েছে, তারাতো আইন প্রণেতা। তাদের আইন প্রণয়ন করার কথা।

সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমিতো মনে করি, রিলিফের কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়েছে কি-না, এটা দেখা আমলাদেরই কাজ। আপনার গাড়ি ড্রাইভার চালায়, এখন ড্রাইভার কি মালিক হয়ে গেল?

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের ক্ষমতার মালিক জনপ্রতিনিধি বা আমলা কেউ নন। সংবিধান অনুসারে দেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ যে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে, সংবিধান অনুসারে তাদের সুনির্দিষ্ট কাজ থাকে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত নির্বাহীরা (মন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত) উভয়ে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও (এমপিরা) যখন তখন নির্বাহী কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। তবে তিনি এদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কাজ করতে পারেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নিয়োগকৃত সরকারি কর্মকর্তা উভয়েরই সরকার পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং তাদেরকে নিজের সীমানায় থাকতে হবে।

আমলাদের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে করা জাতীয় কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিন্তু সভাপতি হলেও অনেক সিদ্ধান্ত তাকে না জানিয়ে নেয়া হয় বলে গত এপ্রিলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছিলেন, আমাদের থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শ তো করতে পারে। আমরা তাহলে আমাদের মতামতটা দিতে পারি।

কমিটি গঠনের এক মাস পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আমি দেশ বিদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। আমি তাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারি না।

দ্বদ্বের কেন্দ্রে প্রশাসন ক্যাডার

বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে উপজেলা পরিষদ হয়েছে, যাকে প্রশাসনিক একাংশ বলা হয়। এর নিকট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের ১৭টি দপ্তর এবং তাদের কার্যাবলী হস্তান্তরের কথা। বাস্তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যতিরেকে বাকি ১৬টি দপ্তরের কর্তৃত্ব এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ন্যস্ত। এ কারণে উপজেলা পরিষদ একটি অকার্যকর ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে।

ইউএনওদের যে আনসার নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, সেটিও তৃণমূলে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এখন দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেখানেই যে কাজ করেন, সশস্ত্র আনসার প্রহরায় করেন। মনে হয় যেন ওই উপজেলায় একটি বিকল্প পুলিশ থানা তৈরি করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ বলেন, তারা কিন্তু প্রশাসক নয়, তারা কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় ব্যতীত নিচের যে চারটি স্তর রয়েছে, সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছে মর্যাদাহীন অবস্থায় আছে। তারা এমনকি মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সবাইকে ‘মহোদয়’ বলে অ্যাড্রেস করেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ‘স্যার’ অ্যাড্রেস করেন।

তিনি আরও বলেন, একজন চৌকিদারের বেতনও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে হতো। এখন সেটাও ইউএনওর স্বাক্ষরে হয়।

হারুন-অর-রশীদ বলেন, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা আইন ভাঙলে তারা বরখাস্ত হচ্ছে। আপনি দেখান তো, আইন ও সংবিধান লংঘনের কারণে কোন ইউএনও, কোন উপসচিব, কোন সচিবের চাকরি গেছে? না, যায়নি। কেবল জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাদের প্রচণ্ড অবহেলা। এই অবহেলা মূলত জনগণের প্রতি।

এক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, উপজেলা পর্যায়ে আমলারা পরিষদের অধীনেই কাজ করার কথা। কিন্তু পরিষদ নেতৃবৃন্দ তাদের সক্ষমতার অভাবে এবং সরকারের কিছু নিয়ম নীতির বাধার কারণে পরিষদকে পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএনও মূলত উপজেলা পরিষদেরই একজন হস্তান্তরিত কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তথা প্রধান নির্বাহীর অধীনে কাজ করার কথা। কিন্তু সেই কাজটিও হচ্ছে না। তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।

দ্বন্দ্বের চেয়ে মিলই বেশি

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমলাতন্ত্রকে কাজ করানোর ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদদের দুইটা ঘাটতি রয়েছে। একটা হচ্ছে, তাদের সততার অভাব। তারা ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজনীতিকে ব্যবহার করে। সে কারণে তারা সরকারি কর্মচারীদের অনুগ্রহ প্রার্থী হয়। তাই সরকারি কর্মচারীরা তাদেরকে যথোপযুক্ত সমীহ করে না।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতার অভাব। তারা মনোযোগ দিয়ে আইন বিষয়ক কোন কাগজপত্র পড়েন না। গঠনমূলক সমালোচনার পরিবর্তে তারা মেঠো বক্তব্যের স্টাইলে সরকারি কাজের সমালোচনা করেন। এটা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াত্ব এবং আমাদের দুর্ভাগ্য। পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা সচিবদের চেয়েও বেশি পড়াশোনা করে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিকে অফিসারদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এখন আপনি পার্টিকে অর্গানাইজ করেন না, ভোটে প্রার্থীর জয়-পরাজয় সরকারি কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা উল্টো জনপ্রতিনিধির উপর খবরদারি করছে।

তার মতে, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা প্রকল্পের অর্থে সম্পূর্ণ কাজ না করে প্রায়শই দুর্নীতি করেন। এক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা সমঝোতার মাধ্যমে এই দুর্নীতি করেন।

‘এখানেতো দ্বন্দ্বের চেয়ে মিলই বেশি। সমঝোতা করে লুটপাট হয়’ বলেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।

সবাইকে থাকতে হবে নিজ সীমানায়

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পৌরসভার মেয়র। পরে এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন এখনকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। নির্বাহী বিভাগের তিন স্তরে এবং আইন বিভাগে কাজের অভিজ্ঞতাও আছে তার। তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, যারা সরকারি কর্মচারী-তারা যার যার সীমার মধ্যে যদি আমরা থাকি, তাহলে কখনোই কোন সমস্যা হবে না। কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী না।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বুরোক্রেসি কোনো দলের না। এটা রাষ্ট্রের। তারপরও দলীয় সরকার যখন থাকে, সেখানে দল যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছে, সেটা তারা বাস্তবায়ন করবে। সেই কাজে পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে আমলাতন্ত্র। অর্থাৎ পলিসি ঠিক করবে রাজনীতিবিদরা, বাস্তবায়ন করবে আমলাতন্ত্র। এটা দুইজনের কাজ। আমরা যার যার কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি।

স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কাজে সংসদ সদস্যরা থাকতে চান এমন দৃষ্টি আকর্ষণের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রোডস, এলজিইডি, পিডাব্লিউডির৷ কিন্তু কোন রাস্তা হবে, কোন ব্রিজ হবে, কোন ভবন হবে- এগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সরকারের রাজনৈতিক অংশের।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমি তো আর টেন্ডার ডাকবো না। ঠিকাদারি করবো না। এটা তারা দেখবে। তবে কেউ নিয়মমতো কাজ না করে, যদি বুঝি এখানে অন্যায়ভাবে কাজ হয়েছে, একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার দায়িত্ব আছে।

উন্নত আমলাতন্ত্র কীভাবে হবে?

বিশ্বব্যাংকের গভর্ন্যান্স ইন্ডিকেটরকে অনেকে আমলাতন্ত্রের দক্ষতার মাপকাঠি হিসাবে দেখেন। তারা ছয়টি ক্যাটাগরিতে এই ইন্ডিকেটরকে বিবেচনা করে থাকেন। এগুলো হচ্ছে, মত প্রকাশ ও জবাবদিহিতা; রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ফলপ্রসূ সরকার ব্যবস্থা, রেগুলেটরি মান, আইনের শাসন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ।

২০৪১ সালের উন্নত দেশে একটি উন্নত ও কার্যকরি আমলাতন্ত্র পেতে এখনই নানা পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বলেন, উন্নত প্রশাসন পেতে কেবল প্রশাসনের দিকে নজর দিলেই হবে না, প্রশাসনকে উঁচু মানে নিতে হলে রিক্রুট করতে হবে মেধাবী লোকদের। আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান খারাপ হলে মেধাবী পাওয়া যাবে না। পিএসসির ভাইভায় দেখি অ্যাভারেজ লোকই আসছে। অনেকেই বিদেশে চলে যাচ্ছে। এদেরকে আনতে আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দিতে হবে। পদায়ন-পদোন্নতিতে আনবায়াজড থাকতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য লোকরাই যাতে পদোন্নতি পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাও কিন্তু এখানে ভালো প্রশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।

আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, অভিযোগ আসছে, তারা আমলানির্ভর হয়ে পড়ছে। এটা কিন্তু আসতো না যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব যথাযথ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করতো।

‘পাশাপাশি তারা আবার দলের প্রতি অনুরাগী কিনা বা দলের বিপরীতে কারো অবস্থান আছে কিনা, এই জিনিসগুলো তারা যাচাই-বাছাই করে। যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এটা করে, করে চলেছে এবং বেড়ে যাচ্ছে। এটাও কিন্তু প্রশাসনের মান কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। এটা বন্ধ করতে হবে’ বলেন আলী ইমাম মজুমদার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.