ব্রেকিং নিউজ

বদরের চেতনায় শাণিত হোক মুমিনের ইমান

ইশতিয়াক মু.আল-আমিন
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র লড়াই হলো বদর যুদ্ধ। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় ও ইনসাফের লড়াই। বদর যুদ্ধে আল্লাহ তা’য়ালা অসম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩) ২য় হিজরির ১৭ রমজানেরে এ যুদ্ধটি মুসলিমদের অস্তিত্বের সংকট থেকে মুক্তি দিয়ে অমিত সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছে দেয়। ঘোরতর এ যুদ্ধে কাফিরদের পক্ষে ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বন্দী হয়। আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা, নদর বিন হারেস ও উমাইয়া বিন খালাফের মতো কুরাইশ শীর্ষস্থানীয় নেতারা কাপুরুষের মতো মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে মাত্র মুসলিম পক্ষে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনসারসহ ১৪ জন শহীদ হন। মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ক্ষুদ্র বাহিনীর হাতে সেদিন পরাজিত হয়েছিল মক্কার একহাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী। অথচ মুসলিম বাহিনীর জনবল, যুদ্ধ উপকরণ ছিল একেবারে সীমীত। সে সময়ের তুলনায় আজ মুসলমানদের শক্তি সামর্থ ও জনসংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে যা দরকার সব আল্লাহ নেয়াতম স্বরূপ মুসলিম বিশ্বেকে দিয়েছেন । তেল , স্বর্ন, রাবার থেকে শুরু করে ভৌগোলিকভাবে নৌপথ, আকাশপথ ও স্থলপথ সহ সকল কিছু মুসলিমদের হাতের মুঠোয়। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের অবস্থা এতটাই লাজুক যে মরণঘাতি অস্ত্র বা ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয় মুসলমানের শরীরে । কারও একটু টু শব্দ পর্যন্ত করার ক্ষমতা নেই । সারা বিশ্বে মুসলনারা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সহ ইসলাম বিদ্ধেষীদের হাতে মার খাচ্ছে। সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মুসলমানগণই। ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির ও আমাদের প্রতিবেশি মিয়ানমারের আরাকানের দিকে তাকালে মনে হয় যেন মুসলমানরাই একমাত্র সেই জাতি যাদের জীবন, সম্পদ, ঘরবাড়ি এবং তাদের মা-বোনদের ইজ্জতের কোন মূল্য নেই। যেভাবে ইচ্ছা কাফের মুশরিকেরা মুসলমানদের মারতে পারে; তাদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের সম্পদ দখল করতে পারে। শধু তাই নয় আজ পৃথিবীতে যারা সবচেয়ে বেশি মানবাধিকারের কথা বলে তাদের নেতৃত্বেই মুসলিম নিধন চলছে দেশে দেশে।মুসলমানরা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও নিপিড়ীত জাতি। নিকট অতীতে ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, মিয়ানমারে যত মুসলমান মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে তা একত্রিত করলে গোটা পৃথিবী কালো মেঘে ছেয়ে যাবে, যত মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে তাদের হাড়গুলো একত্রিত করলে একটি হিমালয় পর্বতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে, তাদের রক্তগুলো একত্রিত করা হলে ফুরাত নদীর মত একটি নদী হয়ত বয়ে যাবে। আজ আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে মুসলমানদের বুক ফাটা আর্তনাদ। মনে হচ্ছে যেন মুসলমানদের যোগ্য কোনো আভিভাবক নেই, কোন আশ্রয় নেই। অথচ এই মুসলমানরাই এক সময় গড়েছিল সভ্যতার সোনালী ইতিহাস। শাসন করেছিল অর্ধ পৃথিবী। ইতিহাসের এই বিজয়ী জাতির আজ এই দুর্দশা কেন? আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের এই চরম দুর্দশার একমাত্র কারণ হলো মুসলমানদের ঈমানী দুর্বলতা এবং কাপুরুষতা। মুসলিম বিশ্ব আজ বহুদাবিভক্ত। মুসলমানরা পরিণত হয়েছে তাগুতী শক্তির ক্রীড়নকে। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক,সিরিয়া ও আরাকান জুড়ে কাফের মুশরিকেরা মুসলিম নিধনের মহড়া দেয়, ইসরাঈলী হায়নারা ফিলিস্তিনের মা-বোনদের বুকে উপর দাঁড়িয়ে নৃত্য করে, পিতার সামনে মেয়ের ইজ্জত লুন্ঠন করে, মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা মুসলমানদের কচুকাটা করে । ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে মুসলিমদেরকে পিটিয়ে হত্যা করছে। এনআরসির নামে পাশ্ববর্তী দেশে নিরিহ মুসলমানদেরকে ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত করে রেখেছে। নতুন করে চিনে কমপক্ষে ১০ লক্ষ মুসলিম নর নারীকে বন্দী শিবিরে নির্যাতনের মাধ্যমে আটক রেখে ধর্মান্তরিত করার পায়তারা চলছে। সিরিয়ার রাশিয়া আর আমেরিকার যৌথ বোমা হামলা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অবলীলায় সাগরে ঝাপ দিচ্ছে অথচ মুসলিম নেতারা এই সব জুলুমের প্রতিবাদ টুকুও করতে ভয় পায়। মনে হচ্ছে চতুর্দিকে ধ্বনিত হচ্ছে , ’’হে আমাদের পরোয়ারদেগার আমাদেরকে এ জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর যার অধিবাসীরা জালিম।’’ (সূরা নিসা-৭৫) বর্তমান শতধাবিভক্ত মুসলিম শাসকদের মধ্যে আল্লাহর সাহায্য আসবে কি করে?

বদর প্রান্তরে মুসলমানদের মাঝে যে ঈমানী শক্তি, ঐক্য ও মমত্ববোধ, একনিষ্ঠতা ছিল, সাহাবাগণ যেভাবে ছিলেন কুফুর শিরকের বিরুদ্ধে আপোসহীন এসবের কিছুই তো আজ মুসলিম বিশ্বে নেই। আছে শুধু দ্বন্ধ-কলহ, ক্ষমতার লোভ, বিলাসিতা ইত্যাদি। বিশ্বের কোনো একটি দেশে ইসালামপন্থীদের মধ্যেও সুদৃঢ় ঐক্য নেই। আর একারণেই আজ মুসলিমবিশ্বের এই অবস্থা। আল্লাহর সাহায্যও মদদ থেকে আমরা বঞ্চিত। যদি আমরা বদরের বিজয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি এবং সাহাবায়ে কেরামের ঈমানী চেতনায় যদি উজ্জীবিত হতে পারি, তাহলে আজও পৃথিবীতে ইসলামের পতাকা পতপত কর উড়বে। আমাদের সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, মুসলমানদের এই দুর্দশা দূর হবে। পৃথিবীর কোন তাগুতী শক্তি মুসলমানদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। তাই মুসলিম শাসকদের উচিৎ বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মুসলিম মিল্লাতকে জালিমের কবল থেকে উদ্ধার করে আল্লাহর জমিনে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে আত্ননিয়োগ করা।

লেখক:
ইসলামিক স্কলার ও মানবাধিার ব্যক্তিত্ব
Email:mollikmuhammad83@gmail.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.