ব্রেকিং নিউজ

উত্তর বিশ্বনাথ ঈদগাহ নিয়ে বানোয়াট নিউজের প্রতিবাদ, সকাল ৮ টায় নামাজ পড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন

বিশ্বনাথ(সিলেট)প্রতিনিধি:

বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী উত্তর বিশ্বনাথ শাহী ঈদগাহের ইমাম ও কমিটি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় মিথ্যা বানোয়াট নিউজের প্রতিবাদ করছেন ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা।

ঈদগাহ নিয়ে করা নিউজের জেরে এলাকায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। আগামীকাল সকাল ৮ ঘটিকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ১৬ জুন রবিবার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিনিধির করা ” ৪৫ বছর ধরে যিনি ইমাম তিনিই ক্যাশিয়ার” উত্তর বিশ্বনাথ ঈদগাহের ইমামকে বয়কট ঘোষণা ” শিরোনামে প্রকাশিত নিউজের তথ্য উপাত্ত সঠিক নয়, মান হানিকর এবং এলাকার ঐতিহ্য বিনিষ্ট করার চক্রান্ত বলে এমন দাবী করছেন বর্তমান কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে জল্পনা কল্পনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার।
সরজমিনে এলাকার বিশিষ্ট জনেরা দাবী করছেন ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিনিধি একটি কুচক্রী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কমিটির বিরুদ্ধে এবং নিরপরাধ ইমামকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন, মনগড়া নিউজ প্রকাশ করেছেন। এতে এলাকাবাসীর মান হানী হয়েছে। এলাকার অধিবাসীদের শতবছরে ঐতিহ্যকে ও ঐক্যবদ্ধতার মধ্যে চিড় ধরিয়ে যে ক্ষতি সাধন করেছেন তা ঐ প্রতিনিধি করার অধিকার রাখেন না।

নিউজ প্রকাশের পর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র ও তথ্য। এলাকার একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ করে জানা গেছে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সালের শেষ দিক পর্যন্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী সভাপতি ও আওয়ামীলীগের নেতা এ এইচ এম ফিরোজ আলী এক নাগাড়ে ১০ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অনেকে মনে করেন ; তারা এসব চক্রান্তের চাবিকাঠি নাড়ছেন। দায়িত্বে থাকাকালীন ঈদগাহের কোন উন্নয়ন না করা, হিসাব না দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকাবাসী নতুন কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্তঃ গ্রহণ করেন। সর্বশেষ উপজেলার ১ নং লামাকাজি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, ২ নং খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ আলী, বিশ্বনাথ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান সহ এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ১৬ জুন ২০২৩ সালে স্থানীয় রাজাগঞ্জ বাজারে আলোচনার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এসময় আগের কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্তরা কোন প্রকার হিসাব না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ১০ বছরের কোন প্রকার হিসাব না পাওয়ায় বিস্মিত হন এলাকা বাসী। অহেতুক ঝামেলা এড়াতে এ নিয়ে কেউ কথা বাড়াতে চান না। কিন্তু তাদের অপকর্মের খতিয়ান ধামাচাপা দিতে শেষ পর্যন্ত এলাকার ঐতিহ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের হাত ধরে এমন বক্তব্য সচেতন মহলের। ঈদগাহের রক্ষিত কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে ২০০১ সাল হতে ২০/৮/১২ ইং পর্যন্ত আয় ও ব্যায়ের একটি বিবরনী বর্তমান কমিটির হাতে রয়েছে। এরপর ১০ বছরের কোন হিসাব নাই।

ঈদগাহ নিয়ে করা নিউজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি মাওলানা আবুল বশর ফারুক বলেন, ১৯৮৯ থেকে বর্তমান ইমাম শফিকুর রহমান ইমামতি করছেন এটি একটি সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। তিনি কখন থেকে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন তা এলাকাবাসী অবগত। এই এলাকার শতভাগ মুসল্লীরা অবগত আছেন যে, ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইমাম ছিলেন মাওলানা মুফতি আবদুল খালিক( র.)। ২০০৪ সলে তাঁর মৃত্যুর পর এলাকাবাসী মাওলানা শফিকুর রহমান কে ইমামতির দায়িত্ব প্রদান করেন। শফিকুর রহমান টাকা ও লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তিনি কাছ থেকে সকল হিসাব বর্তমান কমিটি বুঝে পেয়েছে। তিনি এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন ঈদগাহ কমিটির ক্যাশিয়ার যদি ইমাম সাহেব ছিলেন – তাহলে আগের অর্থ সম্পাদক কে ছিলেন? তাদের কমিটির মেয়াদকালে ইমামের কাছ থেকে হিসাব বুঝে না নেওয়ার কারণ কি ছিল? যারা আজ প্রশ্ন তুলছেন তাদেরকে এলাকাবাসী ভাল চেনে, তাদের দূর্নীতির তথ্যগুলো এলাকার সামনে পরিস্কার করা উচিত।
তিনি আরো বলেন ; ২ থেকে ৫ জন দুষ্ট লোকের কারণে এলাকার ১৩ টি গ্রামের মানুষ এখন বিব্রত। এ নিয়ে তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে এবং প্রশাসন এলাকার শান্তি বজায়ের পক্ষে থাকবে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যাকে দিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে তিনি এখন অস্বীকার করছেন এবং বলছেন তিনি এব্যাপারে জানেনই না।

ঈদগাহ নিয়ে কথা হয়েছে বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজাগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান সুইট এর সাথে। তিনি জানান, যারা এলাকার ঐতিহ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তাদের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামীকাল সকাল ৮ ঘটিকায় এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে জামাত আদায়ের মধ্য দিয়ে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা আগামীকাল সকাল ৮ টায় নামাজের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়েছি ইনশাআল্লাহ যথা সময়ে এলাকার মনোনীত ইমামের পেছনে জামাত আদায় করতে পারব।

বর্তমান ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এ টি এম নুর উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে এধরনের যড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এর মোকাবেলা করার আহবান জানান তারা।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রমাপ্রসাদ চক্রবর্তী জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত আছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.