ব্রেকিং নিউজ

নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেইল: কে এই পপি রানা দম্পতি

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি নগরীতে নারী দিয়ে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক সহ চার নারী। আর পলাতক আছে এই অপরাধের মুল হোতা একাধিক মামলার আসামী রানা। তবে চারজন আটককৃত নারীর মধ্যে একজন হলো কথিত সাংবাদিক রানার স্ত্রী পপি।
রানা পপির প্রতারনার কাহিনি অত্যান্ত ভয়াবহ। অপরাধ জগতের দুই মাস্টার মাইন্ড মাস ছয়েক আগে বিয়ে করে সংসার পাতে। বিয়ের পূর্বে রানা পপির নিয়মিত খদ্দের ছিলো। প্রায় সময়ই রানা পপির সাথে টাকার বিনিময়ে শারিরীক সম্পর্ক করতো। পপির ভাষ্য মতে রানা পপির প্রেমে পরে যায় আর সেই কারনে রানা পপিকে অন্য কোন খদ্দেরের কাছে যেতে দিতো না। বিয়ের পূর্বে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পপিকে রানার সাথে বাইকে চড়ে ঘুরতে দেখা গেছে। অবশেষে রানা পপির সম্পর্ক গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় তাদের অভিনব কৌশলে প্রতারণা।

পপি নগরীর নওদাপাড়া ওমরপুর এলাকার বাসিন্দা। তার পিতার নাম বাবর আলী। পিতা- মাতা ও
১৭/১৮ বছর বয়সের একটি ছেলেও আছে পপির পরিবারে। পপির আয়ের মুল উৎস হলো দেহব্যবসা। নগরীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেই বাসায় আরো অন্য মেয়েদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে মেয়ে সাপ্লাই দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে দেহব্যবসা করানোর বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে পপি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে রমরমা দেহব্যবসা চালায় পপি। পপির সাথে দেহব্যবসায় জড়িত কিছু মেয়েকে শর্ট ফিল্মে অভিনয় সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতেও দেখা যায়। জন্মদিনে পার্টিতে প্রায় সময়ই নগরীর কিছু চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ডিজে পার্টি সহ আবাসিক হোটেলে কাস্টমারদের নিয়ে মদপান করে ফুর্তি- উল্লাস করতে দেখা গেছে তাদের। এভাবেই পপির পাপের রাজ্য বিস্তারিত হয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি পপি, অপরাধ জগতে নতুন করে সংযুক্ত করে বিয়ে নামের মোহরানা বাণিজ্যে। পপির নিয়মিত কাস্টমারদের মধ্যে পপি কয়েকজনের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবব্ধ হয়। কৌশলে কাবিন নামায় মোটা অংকের মোহরানা লিখে নিতো পপি। বিয়ের কয়েক মাস পরেই সংসারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি করে আদালতের শরণাপন্ন হয় মোহরানা আদায়ের মামলায়। এমন ঘটনা নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে একটি মামলা চলমান।
পপির সাবেক এক স্বামীর দেওয়া তথ্য মতে পপির প্রতিটা আবাসিক হোটেলে যাতায়াত আছে এবং পপিকে ফোন দিয়ে ডেকে নেয় দেহব্যবসা করার জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পপির এক বান্ধবী বলেন পপি মোহরানা আদায়ের জন্য বিয়ে করে অনেক টাকা -পয়সা করেছে। বাসায় তার ও তার ছেলের রুমে বিলাশ বহুল ডেকোরেশন করেছে। ছেলেকে সরকারি চাকরিতে ঢুকানোর জন্য মোটা অংকের টাকা জমাও রেখেছে।
পপির জরিমানা আদায়ের কাহিনি আরো লোমহর্ষক, তিন বন্ধুর সাথে সারারাত আমোদ ফুর্তি করে টাকা কম দেওয়ায় সকালে হাসপাতালের ওসিসি তে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়ে তার সেই বন্ধুদের নামে ধর্ষন মামলা দায়ের করে ২০১৯ সালে। আর সেই মামলা মোটা টাকার বিনিময়ে আপোষ মিমাংসা করে নেয় ২০২৩ সালে। দেহ ব্যবসার পাশাপাশি পুরুষ মানুষকে থানা পুলিশ মামলা দিয়ে হয়রানি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজে গড়েছে টাকার পাহাড়।
দূর্গাপুর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকেও পপি বিয়ের ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের মোহরানা দাবি করে আদালতে মামলা করে, যা বর্তমানে চলমান। এই মামলা মিমাংসা করে টাকা আদায় করার জন্য পপির বর্তমান স্বামী চেষ্টা চালাচ্ছে।
পপির টাকা আয়ের কৌশল দেখে কথিত সাংবাদিক রানা পপির সাথে বিয়ে করে অপরাধের ষোলকলা পূর্ণ করে। পপি মেয়ে হিসেবে যেমন চালাক ও প্রতারক রানা ছেলে হিসেবে তারও অধিক। সাংবাদিকতার কার্ড নিয়ে ছাগল চুরির মতো জঘন্য কাজ করতে ও দ্বিধা বোধ করেনি। সুদর্শন চেহারার অধিকারী রানা প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইলিং ফিটিংবাজি কাজে পারদর্শী। সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে প্লেবয় হিসেবে।
নারীদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে বিভিন্ন কৌশলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে গড়েছে নিজের বাসা। বিভিন্ন মহলে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তার মুল পেশা মানুষের সাথে প্রতারণা করা।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় আপন মামির সাথে অনৈতিক কাজের জন্য জুতার মালা পরে নিজ এলাকা ছাড়া হয়েছে রানা। চুরি- ছিনতাই, সহজ সরল মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ না করা। টাকা চাইলে ভয়ভীতি হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি বাগমারা উপজেলার কলেজ পড়ুয়া এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। মেয়েটি রানার সরলতার অভিনয় বুঝতে না পেরে রানার প্রেমে আসক্ত হয়ে সর্বস্ব হারায়।
মেয়েটি প্রতিবেদককে জানায় রানা বিয়ের কথা বলে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং আর্থিক সমস্যার কথা বলে সরাসরি ও বিকাশের মাধ্যমে প্রায় একলক্ষ টাকা ধার নিয়েছে। যার প্রমাণ স্বরুপ তার লিখা ম্যাসেজ সংরক্ষিত আছে। মেয়েটি আরও জানায় আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় পপিকে বিয়ে করে। বিষয়টি আমি জানতে পেরে তার সাথে সম্পর্ক শেষ করি কিন্তু সে আমাকে আমার পাওনা টাকা না দিয়ে তার বউ পপিকে দিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। পপি বলে তুমি আমার বাসায় থাকো অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবে। আমি তোমাকে খদ্দেরের কাছে পাঠাবো তারা তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে টাকা দিবে, এতে তোমার মাসে অনেক টাকা রোজগার হবে।
এভাবে অসহায় মেয়েদের দেহব্যবসার পথে নামানোর রের্কডও আছে পপির। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে পপির স্বামী রানার একাধিক মামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ সহ রাজশাহীর বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, শাহমুখদুম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধারার মামলার সত্যতা পাওয়া গেছে কথিত সাংবাদিক মো: শুকুর রানা ওরফে রানা আহম্মেদ ওরফে এমএস রানার বিরুদ্ধে।
রানা ও পপির বিষয়ে শাহমুখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন “রানার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে বর্তমান একটা মামলায় রানা পলাতক আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত তাকে গ্রেফতার করার, একই মামলায় পপি সহ আরও ৩ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলেকে মামলা দিয়ে আদালতে চালান করি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.