…………………………বাবু চেয়ারম্যানের নির্দেশেই সাংবাদিক নাদিমের উপর হামলা

আবুল কাশেম জামালপুর প্রতিনিধিঃ-
সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত হামলার নেতৃত্বেই হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিম। ইউপি চেয়ারম্যানের নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের হাতে নৃশংস হামলার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হলো সাংবাদিক নাদিমকে। সাংবাদিক নাদিম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ সংবাদদাতা ছিলেন। সে নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
শুক্রবার শোক আর শ্রদ্ধায় সাংবাদিক নাদিমকে চির বিদায় দেয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাযা ও দুপুর ১২টায় নিলক্ষিয়া ঈদগাঁ মাঠে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাদা-দাদির কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। সাংবাদিক নাদিমের অকাল মৃত্যুতে সাংবাদিক পুরো জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শুক্রবার বিকালে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহামেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে যান। তিনি সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন ও তাদের সান্তনা দেন। সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়,বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম। পথে বকশীগঞ্জ পাটহাটি মোড়ে ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে এবং তাকে টেনে হেচড়ে রাস্তার ওপারে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যায়। বাবু চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত এই হামলার নেতৃত্ব দেন।
মুমূর্ষু অবস্থায় নাদিমকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা তাকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল রেফার করেন। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় হাসপাতালেই মারা যান সাংবাদিক নাদিম।
নাদিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জামালপুর জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ছাড়াও বকশীগঞ্জে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া জামালপুর প্রেসক্লাব ও বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব তিন দিনের শোক কর্মসূচী ঘোষণা করা সহ বিভিন্ন আন্দালন কর্মসূচী পালন করছে।
নিহত গোলাম রাব্বানি নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে লেখালেখির পর নাদিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার নামে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন তিনি। সেই মামলাটি বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় নাদিম। এর পর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়। বাবু চেয়ারম্যানসহ সকল আসামীর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম শাহীন আল আমীন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ করেছিলেন সাংবাদিক নাদিম। যে কারনে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন নাদিম। নাদিমের খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। যতদিন বাবু চেয়ারম্যানসহ সকল আসামী গ্রেপ্তার না হবে ততদিন ঘরে ফিরবে না সাংবাদিকরা।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার বলেন,সভাপতি শাহীনা বেগম ঢাকা থেকে বকশীগঞ্জে আসছেন। আসলেই সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো.সোহেল রানা বলেন,নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।