ব্রেকিং নিউজ

প্রভাষক মনুর শখের আম বাগানে বাজিমাত।

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মাত্র তিন বছর আগে বিদেশি জাতের আমগাছ দিয়ে শখের বাগান শুরু করেন প্রভাষক বদরুল ইসলাম মনু। ইন্দোনেশিয়ার ‘কিং অব চাকাপাত’ নামের ওই গাছটি পেতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয় আর গুনতে হয় হাজার টাকা। শখ-সাধ্য আর পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছগুলো কিনে বিপাকে পড়েন তিনি। কারণ বেশি দামে ক্রয় করে গাছ কেনায় পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। কিন্তু বছর না যেতেই আম গাছগুলোতে ফলনে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক হাজার টাকায় কেনা আম গাছগুলোতে প্রায় কয়েক মণ আম ধরে। যার মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকার উপরে। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি।
বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টির মতো গাছ রয়েছে। যার মধ্যে আম গাছের চারাই বেশি। সেই সাথে তার এই বাগানে প্রায় ১০০ জাতের ফলজ গাছ রয়েছে।
বাগানের প্রায় প্রত্যেকটি গাছেই বর্তমানে থোকায় থোকায় ছেয়ে গেছে আম বাগান, আঙ্গুর, লেবু, মাল্টা, কমলা, পেয়ারাসহ অন্যান্য বাহারি ফলে। তবে বাণিজ্যিকভাবে আঙুরের ফলন না হলেও বাসার চাহিদা মেটানো হচ্ছে এই বাগান থেকে। অনেক সময় আত্মীয় স্বজনদের বাসাতেও উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে এই ফলগুলো। সেই সাথে আশপাশ এলাকা থেকে আসা পাখিদেরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে এই বাগান থেকে।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের বদরুল ইসলাম মনু শখের বসে তিন বছর পুর্বে বাড়ির আঙিনার একপাশে ২০ শতক জায়গায় একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। আর এই বাগানে রয়েছে কাঠিমন আম, ম্যাংগো ব্যানানা আম, ল্যাংড়া, মাল্টা, দুই জাতের আঙ্গুর, কাজি পেয়ারা, লেবু, পেপে, কাঠাল, বাতাবী লেবু, আপেলকুল, কমলা, আপেল, নাসপাতি, শরিফা, আতাফল, ব্লাক স্টোন আম, ইন্দোনেশিয়ার কিং চাকাপাত আম , হাড়িভাঙ্গা, আমরুপালী, ড্রাগন, বারী ফোর লিচু, কলা, জাম, জামরুল, বরই, জাম্বুরা, লটকন, নারিকেল, আমড়াসহ বিভিন্ন জাতের ফল তাঁর বাগানে শোভা পাচ্ছে। আমের ভারে প্রতিটি গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই তার বাগান দেখতে আসছেন। এসকল ফলের চারায় বাড়ির আঙ্গিনার চারপাশ সবুজে ছেয়ে গেছে। আম, আঙুরের গাছগুলোতে ডালে ডালে ঝুলছে আম, আঙুরের থোকা।
মৌসুমি ফলের পাশাপাশি আছে বারোমাসি নানা ফল। একই ফলের টক ও মিষ্টি দুই প্রজাতির গাছই আছে। তার পাশাপাশি আছে কাজি লেবু, কাচা মরিচ, মুম্বাই মরিচ, পুঁইশাক, বেগুন, কলমিশাক, সবুজশাক, ডাঁটা, টমেটো, শিম, লাউ, কুমড়া, ধনেপাতা, কাকরল, ঝিঙে, ঢেড়স, করলা, চিচিঙ্গা, শালগমসহ নানা সবজির আবাদ করেছেন। আমলকি, আদা, নিম, তুলসী, হলদি ও অ্যালোভেরার মতো ভেষজ গাছও আছে। আছে ঘর ও বেলকনি সাজানোর মানিপ্ল্যান্ট, স্নেকপ্ল্যান্ট, পাতাবাহার, বেবিটিয়ারস, কইলাস ও স্পাইডারপ্ল্যান্ট। চায়না বটগাছ, দেশি বটগাছ, পাকুড় ও জেডপ্ল্যান্টের মতো বনসাইগাছও আছে তাঁর আঙিনায়। এছাড়াও বাগানের মৌমাছির ভোঁ-ভোঁ শব্দে চোঁখে পড়ে মধু চাষ যা অনেক সুস্বাদু তার একপাশে পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করতে দেখা গেছে।
বদরুল ইসলাম মনু বলেন, শিক্ষকতার পেশায় কর্মরত থেকেও সকাল-বিকেল বাগানে নিজেকে শপে দিতাম তাছাড়া ব্যবসা, বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকেও আমার লক্ষ্য থেকে আমি পিছপা হয়নি। প্রথমে পরিবারের উৎসাহ না পেলেও পরবর্তীতে পেয়েছি তাছাড়া আমার স্ত্রী, সন্তানদের সহযোগিতা ছিলো বলে আমার শখের বাগান আজ পূর্ণতা পেয়েছে।
করোনাকালীন সময়ে তাঁর মথায় হঠাৎ বাগান করার নেশা জাগে সেখান থেকেই বাগান গড়ার শখ হয় বদরুল ইসলাম মনুর। ওই বছরেই কয়েকটি আমের চারা লাগিয়ে গড়ে তুলেন বাগান। ধৈর্য ধরে নিয়মিত পরিচর্যা করে এখন তিনি সফল বাগানি।
তিনি আরও জানান, আমার এই বাগানে কোনো প্রকারের ক্ষতিকারক ঔষধ বা কীটনাষক প্রয়োগ করিনি। বাগান থেকে নিয়মিত ফল ও শাক-সবজি পাওয়ায় তাকে আগের মতো বাজারমুখী হতে হয় না। বরং নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিতরণ করেন। স্বল্প খরচে দেশি-বিদেশি গাছের চারা দিয়ে তিনি বাগানটি সুন্দর করে সাজিয়েছেন। তার এই বাগান দেখতে প্রতিবেশীদের পাশাপাশি অনেক দর্শনার্থীরাও প্রতিনিয়ত আসছেন।
উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, বাগানটি অনেক সুন্দর, এর আগে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি।
তিনি বাগান করে মাত্র তিন বছরে সফলতা অর্জন করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই ফল বাগানে আগ্রহী হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাঁর বাগান পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তিনি বাগান পরিদর্শনে গিয়ে মুগ্ধ তিনি। কৃষি কর্মকর্তা বাগানীকে বিভিন্ন রকমের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেন। প্রয়োজনে যেন আমাদের জানানো যে কোন সহযোগিতার জন্য আমারা কৃষি অধিদপ্তর পাশে আছি বলে আশ্বস্ত করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.