দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এলো খুশির ঈদ। ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে এই উৎসব। ঈদ এলেই হৃদয়পটে বেজে ওঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর সেই গান, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’
২০১৯ সালের পর মাঝে দুটি বছরের ঈদ গেছে করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়াই করে। সেই দুর্দিন কাটিয়ে এখন অনেকটা স্বাভাবিক সময়ে ফিরেছে জীবনযাত্রা। আর তাই ঈদও ফিরেছে আগের হাসি-খুশি-আনন্দ নিয়ে। মহামারি জয়ী দেশের মানুষ ঈদ করছে স্বজন-প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে গিয়ে।
গত কদিনে দেশের রাস্তাঘাটে গ্রামমুখো মানুষের স্রোত দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ শহরগুলো থেকে কর্মজীবী মানুষ নাড়ির টানে ফিরেছেন বাড়িতে। মোবাইল অপারেটরগুলোর তথ্যমতে, গত পাঁচদিনে প্রায় এক কোটি সিম ব্যবহারকারী ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছেন। প্রায় সবাই গেছেন মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, স্বজনদের সঙ্গে মিলে ঈদ উদযাপন করতে।
রোজা যেমন সংযম শেখায়, তেমনি ঈদও শেখায় সব ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতে। যেমনটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন তার গানে, ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে,/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ...।’
করোনা মহামারি মানুষের আয় রোজগারে যে ধাক্কা দিয়েছে, সেটা এখনো অনেকে সামলে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, এই দু-বছরে অনেক মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছেন, নিম্নবিত্ত চলে গেছেন দরিদ্র শ্রেণিতে। রোজার মধ্যে টিসিবির কম মূল্যের নিত্যপণ্যের ভ্যানের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন যেন ছিল এসব তথ্যেরই নজির।
এই দরিদ্র-দুস্থদের দরজায়ও ঈদ এসেছে, তবে অনেকেরই ঈদের সেই হাসি-খুশি আটকে আছে অভাবের জালে। সমাজের বিত্তবানরা যথাসাধ্য হাত বাড়ালেই এই জাল ছিঁড়ে ঈদ হয়ে উঠতে পারে সবার। সেই সদিচ্ছাটা থাকতে হবে সবার, যেন নিজের পাতের পাশাপাশি দরিদ্র-দুস্থ প্রতিবেশীর পাতেও ওঠে সেমাই-ফিরনি-পায়েস। নিজের সন্তানের পাশাপাশি সেই প্রতিবেশীর সন্তানের গায়েও যেন নতুন জামা শোভা পায়, এই ভাবনাই পরিপূর্ণ করতে পারে ঈদকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ হেলাল উদ্দিন © সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত
Copyright © 2023 স্বাধীন বাংলা নিউজ | তথ্য মন্ত্রনালয় নিবন্ধন নং-১৭৯