দেশের বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় দূষণের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু বাংলাদেশে! বিশ্বের ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমান পর্যালোচনা করে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার গতকাল মঙ্গলবার ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। বাংলাদেশের পরে অবস্থানকারী ৯টি দেশ হচ্ছে চাদ, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, ভারত, ওমান, কিরগিজস্তান, বাহরাইন, ইরাক ও নেপাল।
আইকিউএয়ার ২০১৮ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশ এই তালিকার প্রথম দিকেই থাকে।
kalerkanthoপ্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে সক্ষম একটি দেশও পাওয়া যায়নি। শুধু তিনটি অঞ্চলে এই মান পাওয়া গেছে।
কোনো এলাকায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভেসে থাকা ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার-পিএম) পরিমাণ কত তার ভিত্তিতেই এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯ মাইক্রোগ্রাম। অথচ ডাব্লিউএইচও গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাতাসে পিএম ২.৫-এর সহনীয় বার্ষিক মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৫-এ নামিয়ে আনে।
দেশভিত্তিক পরিসংখ্যানে শীর্ষ অবস্থানের পাশাপাশি দূষিত রাজধানী শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। এর পরে থাকা অন্য রাজধানী শহরগুলো হলো এনজামেনা (চাদ), দুশানবে (তাজিকিস্তান), মাসকট (ওমান), কাঠমাণ্ডু (নেপাল), মানামা (বাহরাইন), বাগদাদ (ইরাক), বিশকেক (কিরগিজস্তান) ও তাসখন্দ (উজবেকিস্তান)।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, পিএম ২.৫-এর মাত্রা পাঁচ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে কম রয়েছে বিশ্বের তিনটি অঞ্চলে। সবচেয়ে ভালো বায়ুমান রয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফরাসি মালিকানাধীন দ্বীপ নিউ ক্যালিডোনিয়ায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ ভার্জিন আইল্যান্ডস ও পুয়ের্তোরিকোর বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা পাঁচ মাইক্রোগ্রামের কম।
প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বর্তমানে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বড় পরিবেশগত দূষণ। এর কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। বায়ুদূষণজনিত কারণে হাঁপানি, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যাসহ বহু রোগ হয়। বিশ্বে প্রতিদিন অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় আট শ কোটি ডলার, যা মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ। গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী বায়ুদূষণ। গত বছর সবচেয়ে নেতিবাচক বায়ু ছিল মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায়। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৫০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলের।
বিশ্বের সাতটি দেশে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। এর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চাদের পিএম ২.৫ মাত্রা ৭৫.৯ মাইক্রোগ্রাম এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের ৬৬.৮ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভারতের পিএম ২.৫ মাত্রা ৫৮.১ মাইক্রোগ্রাম।
ডাব্লিউএইচও বলছে, পিএম ২.৫-এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলে সেই বাতাসকে আর স্বাস্থ্যকর বলা যায় না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ৩.৪ শতাংশ শহরের বাতাসে ডাব্লিউএইচওর প্রত্যাশিত বায়ুমান ছিল। আবার ৯৩টি শহরের পিএম ২.৫ গ্রহণযোগ্য ওই মাত্রার চেয়ে দশ গুণ বেশি।
রাজধানী হিসেবে না ধরে শহর অনুযায়ী বিবেচনা করলে দূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান দাঁড়ায় ২৮তম স্থানে।
আইকিউএয়ার বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ভিয়াড়ি এবং এরপরই রয়েছে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ শহর। সবচেয়ে বেশি দূষিত ১৫টি শহরের ১০টি ভারতে এবং তাদের দূষণ রাজধানী দিল্লির কাছাকাছি। উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বাধিক দূষিত ১০০টি শহরের তালিকায় ভারতেরই ৬৩টি। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশে।
বায়ুমান বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রযুক্তিপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ২০২০ সালের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গত বছর আইকিউএয়ার বিশ্বের ১০৬টি দেশ ও অঞ্চলের চার হাজার ৭৪৫টি শহরের বায়ুমান প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার তারা বিশ্বের আরো দেশ ও অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করে প্রতিবেদন তৈরি করল।
সূত্র : আইকিউএয়ার, এনডিটিভি
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ হেলাল উদ্দিন © সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত
Copyright © 2023 স্বাধীন বাংলা নিউজ | তথ্য মন্ত্রনালয় নিবন্ধন নং-১৭৯